সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন শেষে গভীর রাত পর্যন্ত সোশ্যাল সাইটগুলোতে এই বিষয়ে চলেছে তুমুল চর্চা। ওই ভিডিওতে দেখা যায় এক তরুণীকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছেন তার এক বন্ধু। দু হাত দিয়ে তরুণীর চোখ বন্ধ করে ধরেন।

এরপর চোখ খুলে দেন, দেখা যায় ধীরে ধীরে রেস্তোরাঁয় একে পাঁচ তরুণ প্রবেশ করেন। এরপর ওই তরুণীকে ৬ যুবক নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। এসবের মধ্যে অন্যতম অভিযোগ, মেয়েটি নাকি একই সঙ্গে ৬ ছেলের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে গেছেন।
‘স্টারগল্প’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে এমন একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে, মিরপুরের ওই রেস্তোরাঁয় ৬ যুবক মিলে তরুণীর নিকট নানা প্রশ্নের জবাব চাইছেন। এক সময় তরুণী হাঁত থেকে একটি বস্তু ছুঁড়ে মারেন। এক সময় কান্নাও করে ফেলেন।

রোমান হক নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েকটি ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে একজন বলছেন, মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্কে এমনভাবে জড়িয়েছিলেন যে তিনি সাইকো হয়ে গিয়েছিলেন। মেয়েটিকে তিনি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন। তার স্বজন বন্ধু বান্ধবরাও ওই মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলতেন তিনি শুনতেন না। দামি উপহার সামগ্রী মেয়েকে তিনি দিতেন। একটা সময় তিনি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারেন মেয়েটি ৬ টি প্রেম করছে একই সঙ্গে। এরপর সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিরপুরের ওই রেস্তোরাঁয় ডেকে আনেন। যুবকের দাবি সকলেই তার প্রেমিক।

রোমান হকের অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি ভিডিওসহ পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ২৪ হাজার। মন্তব্য পড়েছে প্রায় ৬ হাজার। আর লাইক পড়েছে ৫৩ হাজার। এছাড়াও ১০ টি অ্যাটাচমেন্ট পৃথকভাবে লাইক শেয়ার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই পোস্ট ‘স্টার গল্প’ নামের ফেসবুক পেজ ভিডিও বানায়। যেখান থেকে প্রায় অর্ধকোটিবার ভিডিওটি দেখা হয়েছে।

মেয়েটির অপরাধ ও তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাহ্যমে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। দিনভর এই ঘটনায় ট্রল, সমালোচনা, মিম চালানো হয়েছে। মেয়েটির ভিডিও ডাউনলোড করে আপলোড করা হয়েছে শত শত পেইজে ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলছেন, ‘মেয়েটির অপরাধ থাকলেও আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। তিনি মনে করেন অনলাইন হ্যারাজমেন্ট মোটেও কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘যারা এই ভিডিও বা ছবি ছড়িয়েছে সেটা সাইবার অপরাধ। ওই মেয়ের ইথিক্যাল সমস্যা থাকলে সেটার সমাধান মোটেই অনলাইন হ্যারাজমেন্ট নয়। হয়তো ওই মেয়ের কাউন্সিলিং দরকার, তবে অন্যদের এইভাবে হ্যারাজ করার অধিকার নাই, আইনত নিজের হাতে তুলে নেয়া যায় না!’

নাজমুল হক বলছেন, ‘নয় বা ছয়, সংখ্যা যেটাই হোক, এটার জন্য আপনি কম্পিটেন্ট অথরিটির কাছে কতখানি ইথিক্যাল বিচ্যুতির বা প্রতারণার অভিযোগ তুলবেন সেটা আপনার অধিকার ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রচলিত আইন মোতাবেক সুবিচার পাবেন সেটাও অধিকার। তবে এটা আপনার অনধিকার ও অপরাধ যে, আপনি তাকে পাব্লিক্যালি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যারাজ করবেন। বলা বাহুল্য ওই মেয়ের এখন এটা অধিকার হলো যে, সে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে জাজমেন্টাল হলে বিপদ প্রত্যাসন্ন!’